বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪

আবাদ থেকে বিক্রি সবই করেন সেরিনা

পাটের জমিতে বীজ লাগানো থেকে শুরু করে আবাদ ও বিক্রি সব কিছুই করেন চাষি সেরিনা বেগম। ছবি: দৈনিক বাংলা
চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশিত
চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০৮:৪১

আব্দুর রব নাহিদ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ

চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার মর্দনা-বিরামপুর। সকালে গ্রামের রাস্তায় নারীরা ব্যস্ত পাটের আঁশ ছড়ানোর কাজে। তাদের সঙ্গেই কাজ করছিলেন এক নারী। তাকেই আবার দেখা গেল ছড়ানো পাটের আঁশ বিলের পানিতে ধুয়ে একসঙ্গে করে রাখতে। বলা যায়, একহাতেই যেন সব কাজ সামলাচ্ছেন তিনি।

কাছে গিয়ে নাম জিজ্ঞাসা করতে জানালেন, তিনি সেরিনা বেগম। অন্য সব নারীরা যেখানে অন্যের জমির পাটের আঁশ ছাড়াচ্ছিলেন, সেরিনা সেখানে নিজের জমির পাটের আঁশই ছাড়াচ্ছিলেন নিজ হাতে। তিনি আরও জানালেন, পাটের জমিতে বীজ দেয়া থেকে শুরু করে আবাদ, আঁশ ছাড়ানো সবই তিনি নিজ হাতেই করেন। নিজেই পাট বিক্রি করতে চলে যান হাটে।

সেরিনা বেগমের সঙ্গে কথা হয় বেশ কিছুক্ষণ। জানালেন, একবিঘা জমি আধি ভাগে (ফসলের অর্ধেক জমির মালিকের) নিয়ে এবার পাটের আবাদ করেছেন। জমি চাষ দেয়া, বীজ বোনাসহ বিভিন্ন কাজ নিজেই করেছেন, কিছু শ্রমিকও নিয়েছিলেন সহায়তার জন্য। সার-বীজ কেনাসহ সব মিলিয়ে তার এক বিঘা জমিতে খরচ হয়েছে সাত হাজার টাকার মতো। সেরিনা আশাবাদী, জমিতে এবার ১২ মণ পাট হবে। তাতে কিছু লাভ থাকবে তার।

সেরিনা দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘আমি নিজেই পাটচাষ করেছি প্যাট-মানুষ (শ্রমিক) লিয়্যা। খরচ হয়্যাছে সাত-সাড়ে সাত হাজার। আর নিজে খ্যাটাছি। এখন আশা করছি ১০-১২ মণ পাট যদি হয়, আর যদি ২৫০০ টাকা দাম প্যায়, তাইলে কিছু লাভ হবে।’ আধি ভাগের চুক্তি অনুযায়ী উৎপাদিত পাটের অর্ধেক পাবেন জমির মালিক, বাকি অর্ধেকটা তার।

নিজেই কেন পাটচাষ করতে গেলেন- এমন প্রশ্নে সেরিনা জানান, ‘পাটে লাভ ভালো। তাই জমি বর্গা নিয়ে পাটচাষ করেছেন। এখন উৎপাদিত পাট বিক্রি করলে যা লাভ হবে, তা দিয়েই চলতে চান। সেরিনার কথায়, ‘বসে থাকলে তো কেউ খ্যাতে (খেতে) দিবে না। কর্মকরায় খ্যাতে হবে (কাজ করে খেতে হবে)। তাই জমি বর্গা লিয়্যাই কৃষিকাজ করছি।’

পাশেই ছিলেন সেরিনার মা বিবিজান বেগম। তিনি জানালেন, ‘সেরিনার স্বামী কয়েক বছর আগে মারা গেছেন। এরপর থেকে সংসারের বোঝা পুরোটাই সেরিনার ওপর। তার চার মেয়ে ও এক ছেলের মধ্যে মেয়েদের বিয়ে দেয়া হয়েছে। এখন ১০ বছরের ছেলেকে নিয়ে থাকেন সেরিনা।’

স্থানীয়রা বলছেন, ‘কৃষিতে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়লেও বেশিরভাগ নারীই কৃষিশ্রমিক হিসেবে কাজ করে থাকেন। সে ক্ষেত্রে সেরিনা বেগম একটু ব্যতিক্রম। তিনি নিজেই জমি বর্গা নিয়ে পাটের আবাদ করেছেন। চাষাবাদ থেকে শুরু করে উৎপাদিত পণ্য বাজারে বিক্রির সব ধাপই তিনি নিজে যুক্ত থেকে সম্পন্ন করেন। তার দেখাদেখি অন্য নারীরা এভাবে চাষাবাদে সরাসরি সম্পৃক্ত হলে আর্থসামাজিকভাবে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন তারা।


ফতুল্লায় ছাদ থেকে পড়ে নির্মাণ শ্রমিকের মৃত্যু

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি

নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় নির্মাণাধীন একটি ভবনের তৃতীয় তলার ছাদ থেকে পড়ে মো. ইসমাইল (৫৫) নামে এক নির্মাণ শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় ফতুল্লার দাপা ইদ্রাকপুরের শারজাহান রোলিং মিলস খাঁ বাড়ী এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

নিহত শ্রমিক মো. ইসমাইল নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ থানার রফিকপুরের মুসলিম মিয়ার ছেলে ও শিয়াচর সামাদ মিয়ার বাড়ীর নিচতলার ভাড়াটিয়া।

স্থানীয়রা জানান, দুপুরে ভবনে কাজ করার সময় অসাবধনতায় তিনি ভবনের তৃতীয় তলার ছাদ থেকে পড়ে যান। সে সময় অন্য শ্রমিকরা তাকে উদ্ধার করে দ্রুত খানপুর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

বিষয়টি নিশ্চিত করে ফতুল্লা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূরে আজম মিয়া দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘ভবন থেকে পড়ে ওই শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। এ বিষয়ে এখনো কেউ লিখিত অভিযোগ দেয়নি। কেউ অভিযোগ দিলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’


দেশের ৫ বিভাগে হিট অ্যালার্ট জারি

প্রতীকী ছবি
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশের রাজশাহী, রংপুর, ঢাকা, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের জন্য হিট অ্যালার্ট জারি করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। গতকাল বুধবার এক বিজ্ঞপ্তিতে এই সতর্কবার্তা জারি করা হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রাজশাহী, রংপুর, ঢাকা, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের ওপর দিয়ে চলমান তাপপ্রবাহ গতকাল সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে। এ সময় জলীয়বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তি বাড়তে পারে। এর আগে এপ্রিলে তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে বেশ কয়েকবার হিট অ্যালার্ট জারি করা হয়েছিল।

এ দিকে গতকাল সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, পাবনা, দিনাজপুর, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম এবং রাঙামাটি জেলাসমূহের ওপর দিয়ে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী এবং বান্দরবান জেলাসহ ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল ও সিলেট বিভাগ এবং রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের অন্যান্য অঞ্চলের উপর দিয়ে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে।


ফরিদপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আগুন

ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১৬ মে, ২০২৪ ১০:৫৩
নিজস্ব প্রতিবেদক

ফরিদপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে হাসপাতালের দ্বিতীয় তলার স্টোর রুমে এ আগুনের সূত্রপাত হয়।

স্থানীয় ও হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালটির দ্বিতীয় তলার স্টোর রুম থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। এ সময় আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং ধোঁয়ায় আশপাশ অন্ধকার হয়ে যায়। আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের কয়েকটি টিম কাজ করেছে।

ফরিদপুর ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে ২০ মিনিটের মধ্যে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। তবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রাথমিকভাবে নির্ধারণ করা যায়নি। পরবর্তীতে জানানো যাবে।’

ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক দীপক কুমার বলেন, ‘হঠাৎ করে হাসপাতালটির দ্বিতীয় তলার স্টোর রুমে আগুন লাগে। পরে তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং ধোঁয়ায় অন্ধকার সৃষ্টি হয়। স্টোর রুমটিতে হাসপাতালের ওষুধপত্র, যন্ত্রপাতি, ফ্রিজসহ নানা সরঞ্জাম রয়েছে।


অসহায় নারীদের টাকা নিয়ে উধাও ‘কৃষি ফাউন্ডেশন’

ছবি: দৈনিক বাংলা
আপডেটেড ১৬ মে, ২০২৪ ১০:২৮
এফ এম কামাল হোসেন, কাপাসিয়া (গাজীপুর)

কথা ছিল নারীদের আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য হাঁস-মুরগি ও গবাদিপশু কিনতে ঋণ দেওয়া হবে। সে জন্য ঋণের বিপরীতে সঞ্চয় হিসাবে অগ্রিম টাকাও নেওয়া হয়। কিন্তু নির্দিষ্ট দিনে ঋণ দেওয়ার কথা থাকলেও ঋণদানকারী এনজিও অফিসে গিয়ে সবাই বোকা বনে গেলেন। অফিসে আসবাবপত্র ছাড়া কিছুই নেই, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা পালিয়ে গেছেন। বন্ধ রেখেছেন তাদের নিজেদের মোবাইল ফোন।

ঋণ দেওয়ার নামে এমন অভিনব প্রতারণার ঘটনা ঘটেছে গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের গোসাইরহাট গ্রামে। প্রতারক ওই এনজিওর নাম ‘কৃষি ফাউন্ডেশন’। গত রোববার এমন প্রতারণার শিকার হয়েছেন ওই গ্রামসহ আশপাশের আরও কয়েকটি গ্রামের দুই শতাধিক নারী।

ক্ষতিগ্রস্ত নারীরা জানিয়েছেন, সব মিলিয়ে কৃষি ফাউন্ডেশনের কাছে তারা জমা দিয়েছিলেন ৭০ লাখের বেশি টাকা।

রানীগঞ্জ বাজারের পাশে একটি বাড়ি ভাড়া নিয়ে ‘কৃষি ফাউন্ডেশন’ নামে এনজিওটি গত ১৫ দিন ধরে চলছিল। ঋণের বিপরীতে দৈনিক ভিত্তিতে সঞ্চয় জমা নেওয়া হতো। এ জন্য ব্যবহার করা হচ্ছিল জনপ্রতি একটি করে পাস বই। ওই বইয়ের ওপরের দিকে এনজিওটির নিবন্ধন নম্বর হিসেবে লেখা আছে, গভঃ রেজিস্ট্রেশন নং ম-৬২০/১৯৯২। ঠিকানা হিসেবে লেখা আছে, ১১৮/৫, মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকা, ঢাকা-১০০০।

তবে কাপাসিয়া উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. রুহুল আমিন জানান, কাপাসিয়া উপজেলা সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে এই নামে কোনো এনজিও নিবন্ধন নেয়নি।

কৃষি অধিদপ্তর থেকেও এ ধরনের এনজিও নিবন্ধনের অনুমোদন নেয়নি বলে জানান কাপাসিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুমন কুমার বসাক।

গ্রামের নারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এই মাসের শুরু থেকে বাড়িগাঁও, রানীগঞ্জ ও গোসাইরহাট গ্রামে ঘুরে ঘুরে সমিতির কার্যক্রম প্রচার করেন কৃষি ফাউন্ডেশনের লোকজন। তারা জানান, প্রতি ১০ হাজার টাকা সঞ্চয়ের বিপরীতে নারীদের আত্মকর্মসংস্থানের জন্য এক লাখ টাকা করে ঋণ দেওয়া হবে। এই টাকায় নারীরা গবাদিপশু কিনে লালনপালন করবেন। পরে সাপ্তাহিক, মাসিক কিংবা ষান্মাসিক ভিত্তিতে ৭ শতাংশ সুদসহ পর্যায়ক্রমে ঋণ পরিশোধ করবেন। তারা একেক জনকে সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকা ঋণ দেবেন বলে প্রচার করেন। এজন্য গ্রামে গ্রামে ছোট ছোট ইউনিট গঠন করা হয়। তাদের কার্যক্রম দেখে ঋণ নিতে আগ্রহী হন নারীরা। পাস বইয়ে দৈনিক ও সাপ্তাহিক ভিত্তিতে ঋণের জন্য সঞ্চয় জমা করতে থাকেন তারা। খুব দ্রুত ঋণ পেতে বেশির ভাগ নারী সদস্য এককালীন ১০ থেকে শুরু করে ৫০ হাজার টাকা সঞ্চয় হিসেবে জমা দিয়েছেন। গ্রামের নারীরা জানিয়েছেন, সঞ্চয়ের টাকা জমা নিয়ে পালিয়ে যাওয়ায় তারা এখন আত্মকর্মসংস্থানের পরিবর্তে উল্টো অসহায় হয়ে পড়লেন।

চটকদার প্রচারে ঋণের ফাঁদে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত নারী রহিমা খাতুন বলেন, ১ লাখ টাকা ঋণ নেওয়ার জন্য তিনি ১০ হাজার টাকা সঞ্চয় জমা দিয়েছিলেন। এখন ওই টাকা হারিয়ে তিনি বিপাকে পড়ে গেছেন। মাহমুদা খাতুন নামে অপর নারী জানিয়েছেন, তিনি দুই দফায় দশ হাজার টাকা জমা করেছিলেন। তার পাস বইয়ে টাকা জমার তথ্য লেখা আছে।

তাসলিমা বেগম নামের এক গ্রাহক বলেন, তাকে ৫ লাখ টাকা সহজ শর্তে ঋণ দেওয়ার প্রস্তাব করেছিলেন কৃষি ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তারা। এ জন্য তিনি তিন দফায় মোট ৫০ হাজার টাকা ও আনুষঙ্গিক আরও পাঁচ হাজার টাকা জমা করেন। কিন্তু ১২ মে সকালে ঋণ নিতে এসে হতাশ হয়ে গেছেন তিনি। ঋণদানকারী এনজিও অফিসে এসে কাউকে পাননি তারা।

নূপুর নামে আরেক গ্রাহক জানান, তিনি ও তার মা মিলে মোট ৩০ হাজার টাকা সঞ্চয় হিসেবে কৃষি ফাউন্ডেশনের কাছে জমা রেখেছিলেন। এখন ঋণ পাওয়া তো দূরের কথা, সঞ্চয়ের টাকার হদিস নেই। নূপুর বলেন, ‘আমরা এলাকার সাধারণ মানুষ। এনজিওর ভালো-মন্দ বুঝতে পারিনি। এখন আমাদের এই টাকার কি হবে।’

কৃষি ফাউন্ডেশন নামে ঋণদানকারী ওই এনজিও যে বাড়িটি ভাড়া নিয়েছিলেন, সেটির মালিক মো. তাজউদ্দিন। মঙ্গলবার সরেজমিনে অফিসে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। একাধিকবার ফোন দিয়েও তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

কৃষি ফাউন্ডেশনের একজন কর্মকর্তার মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে বারবার কল দিলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। তাই তাদের বক্তব্য নেওয়া যায়নি।

দুর্গাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম এ ওয়াহাব খান খোকা বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে কোনো এলাকায় যদি কোনো এনজিও চালু করতে হয়, তাহলে সেই এলাকার ইউনিয়ন পরিষদ থেকে অনুমোদন নিতে হয়। আমি এই নামে কোনো এনজিওকে অনুমোদন দেইনি। ভুক্তভোগীদের আইনি সহায়তা পেতে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা হবে।’

কাপাসিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এ কে এম লুৎফর রহমান বলেন, কৃষি ফাউন্ডেশন নামের এনজিওর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য স্থানীয় চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ভুক্তভোগীদের একটি তালিকা তৈরি করে থানায় অভিযোগ দিতে বলা হয়েছে।


উখিয়ায় আরসার আস্তানা: অস্ত্র, গ্রেনেড ও রকেট সেলসহ আটক ২

গ্রেপ্তার হওয়া সলিম ও তার সহযোগি মো. রিয়াজ। ছবি: দৈনিক বাংলা
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
কক্সবাজার প্রতিনিধি

কক্সবাজারের উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন গহীন পাহাড়ে রোহিঙ্গাদের সন্ত্রাসী গোষ্ঠি আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) আস্তানার সন্ধান পেয়েছে র‌্যাব। যেখানে টানা ৬ ঘন্টার অভিযানে অস্ত্র, গ্রেনেড ও রকেট সেলসহ দুই সন্ত্রাসীকে আটক করেছে র‌্যাব।

বুধবার ভোর ৫টা থেকে উখিয়া উপজেলার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন গহীন লাল পাহাড়ে এ অভিযান চালানো হয় বলে জানান র‌্যাব সদর দপ্তরের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মোহাম্মদ আরাফাত ইসলাম।

অভিযানে উদ্ধার করা হয়েছে ৫টি রকেল সেল, ৩টি রাইফেল গ্রেনেড, ১০টি দেশীয় তৈরি হ্যান্ড গ্রেনেড, ১৩টি ককটেল, ১টি বিদেশি রিভলবার, ৯ রাউন্ড পিস্তলের এ্যামুনিশন, ১টি এলজি এবং ৩টি ১২ বোর কার্তুজ।

অভিযানে আটক করা হয়েছে, আরসার অন্যতম প্রধান সমন্বয়ক ও কমান্ডার ১৫ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সৈয়দুল আবেরার ছেলে মো. শাহনুর প্রকাশ মাস্টার সলিম (৩৮) ও সলিমের অন্যতম সহযোগি ৮ নম্বর ক্যাম্পের মৃত মোহাম্মদ নুরের ছেলে মো. রিয়াজ (২৭)।

অভিযান শেষে বেলা ১২ টায় ঘটনাস্থলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব সদর দপ্তরের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মোহাম্মদ আরাফাত ইসলাম জানান, সম্প্রতি ঘটে যাওয়া হত্যাকান্ড এবং বিভিন্ন সন্ত্রাসী ঘটনার প্রেক্ষিতে র‌্যাব-১৫ গোয়েন্দা তৎপরতা ও নজরদারি শুরু করে। যার সূত্র ধরেই জানা যায় মাস্টার সলিম বর্তমানে বাংলাদেশের আরসার প্রধান হিসেবে নেতৃত্ব দিচ্ছে এবং তার নেতৃত্বে পুনরায় হত্যাসহ বিভিন্ন অপরাধ কর্মকান্ড পরিচালনা ও পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে অস্ত্র-গোলাবারুদ সংগ্রহ করে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নাশকতার সৃষ্টির চেষ্টা চলছে। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ভোরে উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন লাল পাহাড়ে আরসার আস্তানায় অভিযান পরিচালনা করে র‌্যাব। এসময় দুইজন আরসা সন্ত্রাসী আটক করতে সক্ষম হয়। তাদের কাছ থেকে অস্ত্র, গ্রেনেড ও রকেট সেল উদ্ধার করা হয়েছে।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের সূত্র ধরে কমান্ডার মোহাম্মদ আরাফাত ইসলাম জানান, শাহনুর প্রকাশ মাস্টার সলিম ২০১৭ সালে বাংলাদেশে প্রবেশ করে এবং ১৫ নম্বর ক্যাম্পে বসবাস শুরু করে। সে মিয়ানমারে থাকাকালিন সেখানকার আরসা জোন কমান্ডারের দায়িত্বে নিয়োজিত ছিল। এছাড়াও আরসা প্রধান আতাউল্লাহ আবু আম্মার জুনুনির দেহরক্ষী হিসেবে দুই মাস দায়িত্ব পালন করে। বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থী হিসেবে ২০১৭ সালে আসার পর মৌলভী আকিজের মাধ্যমে আরসায় পুনরায় যোগদান করে। আরসার হয়ে আধিপত্য বিস্তার কোন্দলসহ খুন, অপহরণ, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে পড়ে। অস্ত্র চালনাসহ বিভিন্ন বিস্ফোরকের উপর পারদর্শী সে। তার বিরুদ্ধে ৩টি হত্যা মামলাসহ অন্যান্য বিভিন্ন অপরাধে একাধিক মামলা রয়েছে। আর রিয়াজ তার সহযোগি। এ ব্যাপারে মামলা করে আটককে উখিয়া থানায় সোপর্দ করার প্রক্রিয়া চলছে বলে জানান তিনি।

তিনি আরও জানান, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আধিপত্য বিস্তারসহ বিভিন্ন কারণে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী কর্তৃক ২০২৩ সালে ৬৪ জন এবং ২০২৪ সালে এ পর্যন্ত ১৬ জন নির্মমভাবে হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছে। এ সকল সন্ত্রাসী কার্যক্রম নির্মূলে র‌্যাব শুরু থেকেই বিশেষ গোয়েন্দা তৎপরতা ও নজরদারি চালু রেখেছে। যার প্রেক্ষিতে ১১০ জন আরসা সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়। তাদের নিকট থেকে ৫১.৭১ কেজি বিস্ফোরক, ১২টি বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র, ৫৩টি দেশিয় আগ্নেয়াস্ত্র, ১৫৩ রাউন্ড গুলি/কার্তুজ, ৬৭ রাউন্ড খালি খোসা, ৪টি আইডি ও ৩৫টি ককটেল উদ্ধার করা হয়। এ অভিযান অব্যাহত রাখা হবে বলেও জানান তিনি।

ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনীর বোমা নিষ্ক্রিয়করণ দল যায়। দলটি অভিযানে উদ্ধার হওয়া বিস্ফোরক, গ্রেনেড, আইইডি এবং রকেট সেল নিষ্ক্রিয়করণ করে।


সবুজ অরণ্যের রাতারগুল

ছবি: দৈনিক বাংলা
আপডেটেড ১৫ মে, ২০২৪ ১৬:১০
সালাহউদ্দিন শুভ,কমলগঞ্জ প্রতিনিধি

নির্জন বন, পাখির কিচিরমিচির, সাদা বকের ওড়াউড়ি, সবুজের প্রশান্তি মানেই রাতারগুল। প্রাণ জুড়িয়ে যাওয়া সবুজের সমারোহ চারদিকে। জলের ওপর বৃক্ষের বিস্তার রাতারগুল বনের প্রধান বৈশিষ্ট্য। বনের ৮০ শতাংশ অংশ উদ্ভিদের আচ্ছাদনে আবৃত। এ বনে ৭৩ প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছে। হিজল, বেত, কদম, করচ, মুর্তা, অর্জুন, ছাতিম, বট উল্লেখযোগ্য। এ বনে প্রতি বছর ভারী বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে। সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয় জুলাই মাসে।

বন বিভাগের তথ্যমতে, বনের আয়তন ৩ হাজার ৩২৫ দশমিক ৬১ একর। ১৯৭৩ সালে বনের ৫০৪ একর বনভূমিকে বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য ঘোষণা করা হয়। স্থানীয়দের কাছে এই বন ‘সুন্দরবন’ নামেই বেশি পরিচিত।

সিলেট জেলার সীমান্তবর্তী উপজেলা গোয়াইনঘাটের ফতেহপুর ইউনিয়নে এই জলাবনের অবস্থান।

বাংলার অ্যামাজন নামে পরচিতি সিলেটের গোয়াইনঘাটের রাতারগুল আমাদের দেশের একমাত্র ‘ফ্রেশ ওয়াটার সোয়াম্প ফরেস্ট’ বা জলাবন।

সিলেটের গোয়াইনঘাটে অবস্থিত রাতারগুল বন। জলে অর্ধেক ডুবে থাকা হাজারখানেক সবুজ উদ্ভিদ অতিক্রম করে ডিঙ্গি নৌকায় বনের গহিনে ভ্রমণ করতে পর্যটকরা এখানে ভিড় জমান। নৌকায় ৪-৫ জন সহজেই বসা যায়, ভাড়া পড়ে ৭ থেকে ৮০০ টাকা। আবার যে কেউ দুইজন এক সাথে নৌকাভাড়া নিতে পারবেন।

জলে ডুবে থাকা এ বনে রয়েছে নানা প্রাণীর সমারোহ- সাপ, জোঁক, বেজি, গুইসাপ থেকে শুরু করে রয়েছে বক, মাছরাঙা, টিয়া, পানকৌড়ি, বুলবুলি, চিল, বালিহাঁস, শকুন, বাজপাখি। এছাড়া টেংরা, খলিসা, পাবদা ও কালবাউসসহ হরেক প্রজাতির মাছ। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত এবং জীববৈচিত্র্য সমৃদ্ধ বনটি পর্যটনের জন্য বেশ সম্ভবনাময়। ঘুরতে ঘুরতেই দেখা হয়ে যাবে জল আর জঙ্গলের মিশেলে গড়ে উঠা এক অসম্ভব রূপবতী জলারণ্যের সাথে।

স্থানীয়রা জানান, এখানে দেশ বিদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে হাজার হাজার পর্যটক আসেন। তারা সারাদিন ঘুড়ে বেড়ান বনের মধ্যে। তাছাড়া আসে পাশে অনেক রিসোর্ট আছে। সেখানে পর্যটকরা থাকেন এবং এখানকার খাবার খেয়ে থাকেন।
এদিকে নৌকার মাঝি রুবেল আহমেদ জানান, আমি ২০০৮ থেকে এখানে নৌকা চালাই। আমার স্ত্রী ৩ ছেলে ও ১ মেয়ে নিয়ে সংসার। সারাদিন নৌকা চালানোর পর ৬ থেকে ৭ শত টাকা হাতে থাকে। সংসারও ভালো চলে।

তিনি আরও জানান, নৌকায় করে ঘোরার সময় পানিতে হাত না দেওয়া ভালো। এখানে বিভিন্ন ধরনের পোকামাকড় তো আছেই, বিষাক্ত সাপও পানিতে বা গাছে দেখতে পাওয়া যায় প্রায়। যারা সাঁতার জানেন না, সঙ্গে লাইফ জ্যাকেট রাখতে পারেন। তবে বনের পরিবেশ নষ্ট করবেন না। পলিথিন, বোতল, চিপস, বিস্কুটের প্যাকেট ইত্যাদি পানিতে ফেলবেন না। আমাদের নিজেদের প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষার দায়িত্ব আমাদেরই।

যেভাবে যাওয়া যায়

সিলেট শহরের খুব কাছেই এর অবস্থান। শহর থেকে গাড়িতে করে যেতে সময় লাগে ৩০-৪০ মিনিট। যাত্রাপথ আম্বরখানা, চৌকিদেখি হয়ে বিমানবন্দরকে পেছনে ফেলে হাতের ডানদিকের রাস্তা ধরে সাহেববাজারের দিকে। আম্বরখানার ইস্টার্ন প্লাজার সামনে থেকে লোকাল সিএনজি ভাড়া জনপ্রতি ৫০ টাকা। পথের দু'ধারে থাকা মালনীছড়া আর লাক্কাতুরা চা বাগানের সবুজ চোখে মেখে দ্রুতই পৌছে যাবেন গন্তব্যে। সিএনজি আপনাকে নামিয়ে দেবে একেবারে রাতারগুলের দ্বারপ্রান্তে মোটরঘাট নামক স্থানে। আর নিজস্ব পরিবহনে গেলে সাহেববাজারের কাছে গিয়ে স্থানীয়দের জিজ্ঞেস করলেই পেয়ে যাবেন রাতারগুল আর সেখানকার ফরেস্ট অফিসের খোঁজ। স্থানীয়রা রাতারগুলকে বলেন সুন্দরবন।


অটোরিকশা চালিয়েও এসএসসি পাস

আপডেটেড ১৫ মে, ২০২৪ ১০:৪৩
শিহাব আহমেদ, মুন্সীগঞ্জ

অটোরিকশা চালানোর পাশাপাশি পড়াশুনা করে এসএসসি পাস করে তাক লাগিয়ে দিয়েছে মুন্সীগঞ্জ উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মো. আব্দুল্লাহ হাসান। সামনে কলেজে আরও ভালো ফলাফল করার পরিকল্পনা তার। আব্দুল্লাহ মনে করে, ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়। কাজ করেও যে লেখাপড়া চালানো সম্ভব তারই প্রমাণ দিয়েছে সে।

আব্দুল্লাহ মনেপ্রাণে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে লালন করে। তাই ভবিষ্যতে বিদেশে পাড়ি না জমিয়ে দেশের জন্য কিছু করার অদম্য আগ্রহ তার।

সে মুন্সীগঞ্জ শহরের অলিগলিতে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা নিয়ে ছুটে বেড়ায় রাত-দিন। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে দেখা হয় তার সঙ্গে। সে জানায়, অনেক মেধাবী বিদেশে গিয়ে আর ফেরেন না। সে দেশেই থাকতে চায়। এভাবে দেশ মেধাশূন্য হয়ে যাক এটা তার পছন্দ হয় না।

আব্দুল্লাহ মানুষের পাশে থেকে বর্তমান প্রজন্মের যারা নেতিবাচক কাজে জড়িত, পড়ালেখায় অমনোযোগী তাদের মাঝে সচেতনতা তৈরিতেও কাজ করতে চায়। আব্দুল্লাহ সংসারে চরম দরিদ্রতা দেখে শিশু অবস্থায়ই বাসায় বাসায় পাঠদান করে উপার্জনের চেষ্টা করেছে। তবে এভাবে তার সংসার চালাতে কষ্ট হচ্ছিল। পরে ভাড়ায় মিশুক চালাতে শুরু করে। পাশাপাশি অবসর সময়ে চালিয়ে গেছে পড়াশোনাও।

আব্দুল্লাহ প্রসঙ্গে মুন্সীগঞ্জ উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক তনুজা আহম্মেদ বলেন, ‘নবম শ্রেণি থেকে আব্দুল্লাহ মিশুক চালানোর পাশাপাশি পড়াশোনা করছে। প্রতিদিন সে স্কুলেও ঠিকঠাক এসেছে। একটা ছেলে মায়ের কতটা বাধ্যগত হলে এ রকম হতে পারে তা বোঝাই যায়। ছেলেটি এ সমাজের দৃষ্টান্ত।’

তিনি বলেন, ‘‘ছোটবেলায় আব্দুল্লাহর মাকে ফেলে চলে যায় তার বাবা। তার মা এখন ব্রেইনের রোগে আক্রান্ত। এত চ্যালেঞ্জের পরও আব্দুল্লাহ ‘এ’ গ্রেড পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে। তাই তার পরিবারের পাশাপাশি শিক্ষক ও সহপাঠীরাও খুশি।’’


নওগাঁয় ৪ লাখ ৩১ হাজার টন আম উৎপাদনের আশা

নওগাঁর সাপাহার উপজেলার একটি আম বাগান থেকে তোলা ছবি। .ছবি: দৈনিক বাংলা
আপডেটেড ১৫ মে, ২০২৪ ০৮:৫২
মো. সবুজ হোসেন, নওগাঁ

নওগাঁয় আমচাষিদের প্রতিক্ষার অবসান হতে চলেছে। জেলা কৃষি অফিস থেকে আম পাড়ার ক্যালেন্ডার/সময়সূচি নির্ধারণ করা হয়েছে। আগামী ২২ মে গুটি আম পাড়ার মধ্য দিয়ে আম নামানো শুরু হবে। চাষিরা জানান, এ বছর প্রচণ্ড দাবদাহ ও খরায় আম বাগানের যত্ন ও পরিচর্যা বেশি করতে হয়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে- গুটি/স্থানীয় জাতের আম ২২ মে, গোপালভোগ ৩০ মে, ক্ষীরশাপাত/হিমসাগর ২ জুন, নাকফজলি ৫ জুন, ল্যাংড়া/হাড়িভাঙ্গা ১০ জুন, আম্রপালি ২০ জুন, ফজলি ২৫ জুন এবং আশ্বিনা/বারি-৪/বারি-১১/গৌড়মতি/কাটিমন ১০ জুলাই পাড়ার ক্যালেন্ডার প্রকাশ করা হয়।

এ বছর ৩৩ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে আম বাগান গড়ে উঠেছে। যা থেকে ৪ লাখ ৩১ হাজার ৫০০ টন আম উৎপাদনের আশা। ব্যানানা ম্যাংগো, মিয়াজাকি, কাটিমন, গৌড়মতি, বারি আমচাসহ দেশি-বিদেশি মিলে প্রায় ১৬ জাতের আম চাষ হয়েছে।

জাত ভেদে আম বাগানের পরিমাণ নাকফজলি ৮৯৮ হেক্টর, ল্যাংড়া ১ হাজার ৬১৫ হেক্টর, ফজলি ১ হাজার ৪০৮ হেক্টর, গোপালভোগ ৬১০ হেক্টর, ক্ষীরশাপাত ১ হাজার ৪৭ হেক্টর, বারি-৪ আম ২ হাজার ৪০২ হেক্টর, বারি-১১ আম ৪২ দশমিক ৫০ হেক্টর, মল্লিকা ৩৭ হেক্টর, কাটিমন ১৫৪ দশমিক ৫০ হেক্টর, গৌড়মতি ১৪৩ দশমিক ২৫ হেক্টর, হাড়িভাঙা ৪১ দশমিক ৭৫ হেক্টর, ব্যানানা ম্যাংগো ১০৭ দশমিক ৫০ হেক্টর, আশ্বিনা ২ হাজার ৩২২ দশমিক ৫০ হেক্টর, কুমড়াজালি ১৩ হেক্টর, গুটি/ স্থানীয় ৬০৭ হেক্টর এবং আম্রপালি ১৮ হাজার ৪২২ হেক্টর। জেলায় যে পরিমাণ আম বাগান রয়েছে তার মধ্যে আম্রপালি ৬০ দশমিক ৮০ শতাংশ।

এ বছরের শুরুতে প্রচণ্ড শীত থাকায় ১৫-২০ দিন দেরিতে মুকুল আসে। এ ছাড়া এ বছর প্রচণ্ড খরা ও দাবদাহ বিরাজ করছে। আমের মৌসুমে এ পর্যন্ত দুইবার বৃষ্টি হওয়ায় চাষিদের ব্যাপক উপকার হয়েছে। বরেন্দ্র এলাকা হওয়ায় পানির স্বল্পতা রয়েছে। যেসব বাগান সেচের আওতায় সেগুলো সেচ দেওয়া সম্ভব হয়েছে।

বরেন্দ্র এলাকা হওয়ায় এখানকার আম সুস্বাদু ও সুমিষ্ট। স্বাদে অতুলনীয় হওয়ায় জেলায় ৬০ শতাংশ বাগানই আম্রপালি। এ জেলার আম ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ হয়ে থাকে। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে এ জেলার আম বিদেশেও বেশ সুনাম কুড়িয়েছে।

আমচাষিরা বলেন, এ বছর প্রচণ্ড দাবদাহ ও খরায় অনেক আমের গুটি ঝরে পড়েছে। এতে গাছে কম পরিমাণ আম রয়েছে। এ বছর গাছে আম কিছুটা কম থাকলে গত বছরের তুলনায় ভালো দাম পাওয়া আশা চাষিদের। তবে প্রাকৃতিক কোনো দুর্যোগ না থাকলে লাভবান হতে পারবেন তারা।

সাপাহার উপজেলার ইসলামপুর গ্রামের আমচাষি নুরুজ্জামান বলেন, ‘আম চাষ লাভজনক হওয়ায় প্রতি বছরই বাড়ছে বাগানের পরিমাণ। আমের মুকুল থেকে শুরু করে বাজারজাত করা পর্যন্ত বিঘাতে প্রায় ৩০-৩৫ হাজার টাকা খরচ পড়ে। তবে এ বছর খরায় আরও ৪-৫ হাজার টাকা বেশি খরচ হয়েছে। অপেক্ষার প্রহর শেষ কিছুদিনের মধ্যে আম বাজারজাত করা হবে। গাছে আমের পরিমাণ কম হলেও দাম ভালো পেলে পুশিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে।’

বরেন্দ্র এগ্রো পার্কের স্বত্বাধিকারী সোহেল রানা বলেন, প্রায় ৭৫ বিঘা জমিতে বিভিন্ন জাতের আম বাগান রয়েছে। কৃষিচর্চা অনুসরণ করে বাগান করা হয়েছে।

নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন- আমচাষিরা বাগানের পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। এবার আম উৎপাদনের পাশাপাশি ভালো দাম পাওয়ার আশা। স্বাদ ও দাম ভালো পাওয়ায় আম্রপালি, বারি ও ব্যানানা জাতের বাগানের পরিমাণ বাড়ছে। রপ্তানি পরিসর বাড়াতে উত্তম কৃষিচর্চার মাধ্যমে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।


পাহাড়ি ছড়া থেকে বালু বিক্রি

ক্ষতিগ্রস্ত ছড়াসংলগ্ন চা বাগান
কমলগঞ্জের সুনছড়া ও কামারছড়া থেকে অবৈধ ও অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন করায় ক্ষতিগ্রস্ত ছড়া ও সংলগ্ন চা বাগানের টিলা। ছবি: দৈনিক বাংলা
আপডেটেড ১৫ মে, ২০২৪ ০৩:১৯
মুজিবুর রহমান রঞ্জু, কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার)

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার ডানকান ব্রাদার্সের মালিকানাধীন আলীনগর চা বাগানের ফাঁড়ি সুনছড়া ও কামারছড়া চা বাগান থেকে অবৈধভাবে বালু বিক্রির মহোৎসব চলছে। ছড়া ও ছড়ার পার্শ্ববর্তী চায়ের টিলা খুঁড়ে সিলিকা বালু উত্তোলন করে বিক্রি করা হচ্ছে। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পাহাড়ি ছড়া ও ছড়াসংলগ্ন চা বাগানের টিলা।

অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে চা বাগান কর্তৃপক্ষ ইতোপূর্বে জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দিলেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। ফলে রাস্তা, চায়ের টিলা, ছড়া, কালভার্ট ভাঙনসহ পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি সাধিত হচ্ছে এবং সরকার হারাচ্ছে বিপুল পরিমাণে রাজস্ব। এ ব্যাপারে চা বাগানের পক্ষ থেকে আদালতে মামলাও আছে।

স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, সুনছড়া ও কামারছড়ার বিভিন্ন স্থান থেকে দীর্ঘদিন ধরে সিলিকা বালু উত্তোলন করে বিক্রি করছে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী চক্র। প্রশাসনের যোগশাসজেই এ কাজ চলছে। সে কারণে মাঝেমধ্যে প্রশাসনের লোকেরা লোক দেখানো অভিযান করলেও এর স্থায়ী কোনো সমাধান হচ্ছে না। প্রশাসনের লোকেরা আসার আগেই বালু উত্তোলনকারী চক্র পালিয়ে যায়।

বালু উত্তোলনে ব্যবহৃত ট্রাকের কারণে চা বাগানের রাস্তাঘাট চলাচলের সম্পূর্ণ অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। ফলে বাগানের চা-পাতা পরিবহন ও অন্যান্য দৈনন্দিন কাজে চরম ব্যাঘাত ঘটছে। প্রশাসনের নজর এড়িয়ে এবং চা বাগানের নিষেধকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে বাগানের শ্রমিক, কর্মচারী, কর্মকর্তারা নিরাপত্তার অভাববোধ করছেন।

সংশ্লিষ্ট একটি সূত্রে জানা যায়, ২০১৩ সালের ১৮ জুন প্রজ্ঞাপন দিয়ে মৌলভীবাজার জেলার অন্তর্গত ৫১টি পাহাড়ি ছড়াকে সিলিকাবালু সমৃদ্ধ এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এর মধ্যে ১৯টিকে অযান্ত্রিক পদ্ধতিতে বালু উত্তোলনের জন্য ইজারা দেওয়া হয়। ইজারা গ্রহীতাদের অনিয়ন্ত্রিত ও বেআইনিভাবে বালু উত্তোলনের ফলে কমলগঞ্জসহ জেলার সংশ্লিষ্ট এলাকার পরিবেশ ও প্রতিবেশ বিপর্যয় ঘটছে।

এ ব্যাপারে ২০১৬ সালের ৮ মার্চ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) জনস্বার্থে রিট পিটিশন দায়ের করে। শুনানি শেষে ২১ মার্চ হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ ১৯টি বালুমহালকে পরিবেশগত প্রভাব নিরূপণ (ইআইএ) ও পরিবেশগত ছাড়পত্র (ইসিসি) ছাড়া পরবর্তী ইজারা প্রদানের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা দেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কমলগঞ্জের আলীনগর ইউনিয়নের কয়েকজন বাসিন্দা অভিযোগ করে বলেন, সুনছড়া থেকে ইজারা ছাড়া অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। প্রতিদিন এখান থেকে ৩০-৫০ হাজার টাকার সিলিকা বালু উত্তোলন করে বিক্রি করা হয়। এ বালুর বাজার মূল্য অনেক বেশি।

আলীনগর চা বাগান ব্যবস্থাপক হাবিব আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বিষয়ে ইতোপূর্বে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, পরিবেশ অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করা হলেও কার্যকর কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। এ ব্যাপারে চা বাগানের পক্ষ থেকে মৌলভীবাজার আদালতে মামলাও চলমান আছে। এ চক্রে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল জড়িত থাকায় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ না হওয়ায় চা বাগানের রাস্তাঘাটসহ পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে এবং আমরাও আতঙ্কগ্রস্ত।’

পরিবেশ আইনবিদ সমিতি বেলার সিলেট বিভাগীয় সমন্বয়ক অ্যাড. শাহ সাহেদা বলেন, আদালতের রায় অমান্য করে বালু উত্তোলনের বিষয়টি আদালত অবমাননার শামিল। অধিকাংশ ছড়া চা বাগানের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত। ২০২৩ সালের বালু মহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন অনুযায়ী চা শিল্প ও প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষার জন্য চা বাগানের ভেতরে বালুমহাল লিজ দেওয়া যায় না।

কমলগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রইছ আল রেজুয়ান বলেন, সুনছড়া ও কামারছড়ায় কোনো ইজারা হয়নি। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

অবৈধ বালু উত্তোলন বিষয়ে কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার জয়নাল আবেদীন জানান, ইতোপূর্বে অভিযান করে জরিমানাও করা হয়েছে। সরেজমিন তদন্তক্রমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।


সেফটি অব লাইফকে প্রাধান্য দিয়েছি

ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১৫ মে, ২০২৪ ০০:০৮
চট্টগ্রাম ব্যুরো

জলদস্যুদের কাছ থেকে মুক্ত হয়ে দেশে ফিরেছেন এমভি আবদুল্লাহ জাহাজের ২৩ নাবিক। মৃত্যুপুরী থেকে ফেরা এসব নাবিককে চট্টগ্রাম সিটি মেয়র, বন্দর চেয়ারম্যান, জাহাজের মালিক কেএসআরএম গ্রুপের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানান ফুলেল শুভেচ্ছা ও আন্তরিক অভিনন্দন। তাদের অভ্যর্থনা জানাতে ছুটে এসেছিল প্রতিটি নাবিকের পরিবার ও স্বজনরা। এমন আবেগঘন মুহূর্তে পরিবারের সান্নিধ্যে আপ্লুত নাবিকরাও বুঝতে পারলেন তাদের প্রতি পরিবারের অফুরন্ত ভালোবাসা, বিপুল সাংবাদিকদের উপস্থিতি তাদের জানিয়ে দিল দেশবাসীও সার্বক্ষণিক রেখেছেন তাদের খবর। সবার প্রার্থনায়, সবার ভালোবাসায় ছিলেন তারা।

সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে বন্দি হওয়া ও বন্দিদশায় পার করা দিনগুলোর কথা এতদিন বিভিন্ন সূত্রে জানা গিয়েছিল। গতকাল মঙ্গলবার গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে জাহাজের ক্যাপ্টেন আব্দুর রশিদ বললেন, ‘যেদিন আমরা দস্যুদের দ্বারা আক্রান্ত হলাম, তখন সেকেন্ড অফিসার ব্রিজে ছিলেন। আমি নিচে নেমে অ্যালার্ট দিচ্ছিলাম। সবকিছু অতি দ্রুত ঘটেছে। দস্যুরা স্পিডবোটে এসে জাহাজে উঠে ব্রিজে চলে আসে। আমি আর সেকেন্ড অফিসার আমাদের হিডেন রুমে যেতে পারিনি। সেকেন্ড অফিসার আটক হওয়ার পর আমি গিয়ে দেখি একে-৪৭ রাইফেল তাক করে আছে তার দিকে। আমি যেতেই আমার দিকেও তারা একে-৪৭ রাইফেল তাক করে। তবে আমি নিজেকে স্ট্রং (শক্ত) রেখেছিলাম।’

তিনি বলেন, ‘পরিস্থিতি বুঝে আমি হাত তুলে সারেন্ডার করে বললাম, আমরা বাংলাদেশি, আমরা মুসলিম। আমরা রোজা আছি। দস্যুরা সবাইকে ডাকতে বলে। সবাই চলে আসে সেখানে। এরপর আমরা সবাই সেখানেই ব্রিজের মধ্যে সারাদিন সারারাত ছিলাম।’

ক্যাপ্টেন আব্দুর রশিদ আরও বলেন, ‘আমিও জীবনে প্রথম এমন পরিস্থিতিতে পড়েছিলাম। মৃত্যুর হুমকি ছিল। নাবিকদের কেউ কেউ কান্নাকাটি করছিল। মনে ভয় ছিল; কিন্তু সাহস রেখেছি। বডি ল্যাঙ্গুয়েজ স্বাভাবিক রেখেছি। আমাদের ক্রুর কোনো ক্ষতি না হয়- সেদিকে নজর রেখেছি। সেফটি অব লাইফটাকে প্রাধান্য দিয়েছি।’

তিনি বলেন, ‘সোমালিয়ার দস্যুদের কবল থেকে আমরা ২৩ নাবিকই পৌঁছাতে পেরেছি। সরকার কৌশলগতভাবে সবার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। আমি বলেছিলাম, বিদেশি নৌবাহিনী যেন ভায়োলেন্স না করে, যাতে আমাদের নাবিকদের কারও প্রাণ না যায় বা জাহাজের কোনো ক্ষতি যেন না হয়। আমরা সবাই সুস্থ ও অক্ষতভাবে ফিরতে পেরেছি, পরিবারের কাছে ফিরতে পেরেছি। এ এমন অনুভূতি যা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না।’

গতকাল বিকাল পৌনে ৪টার দিকে চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং এক নম্বর কনটেইনার টার্মিনালে নাবিকদের নিয়ে ভেড়ে কেএসআরএম গ্রুপের আরেকটি লাইটার জাহাজ এমভি জাহান মনি। নাবিকদের নিয়ে সংক্ষিপ্ত অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বন্দর কর্তৃপক্ষ। স্বজনদের পাশাপাশি কেএসআরএমের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও এখানে উপস্থিত ছিলেন।

জিম্মিদশা থেকে মুক্ত হওয়ার পর নাবিকদের কাছে পাওয়ার অপেক্ষায় ছিলেন স্বজনরা। জেটিতে তাদের কারও হাতে ছিল ফুল, কারও হাতে কেক।


হত্যার হুমকি পাওয়ার অভিযোগ, জিডি কাদের মির্জার

ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নোয়াখালী প্রতিনিধি

কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ওবায়দুল কাদেরের ভাই বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জাকে মোবাইল ফোনে হত্যার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় নিরাপত্তাহীনতায় থানায় জিডি করেছেন কাদের মির্জা।

আজ মঙ্গলবার কোম্পানীগঞ্জ থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন তিনি।

সাধারণ ডায়েরিতে কাদের মির্জা উল্লেখ করেন, আগামী ২৯ মে উপজেলা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে চেয়ারম্যান প্রার্থী মিজানুর রহমান বাদলের অনুসারীরা গত কয়েকদিন ধরে একটি নম্বর থেকে তাকে হত্যার হুমকি দিয়ে আসছে। তিনি (মিজানুর রহমান বাদল) কোম্পানীগঞ্জের পার্শ্ববর্তী দাগনভূঞা, সুবর্ণচর, কবিরহাট ও সেনবাগ উপজেলার অস্ত্রধারীদের এনে নির্বাচনের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নষ্ট করছেন।

এ ছাড়া কোম্পানীগঞ্জের আওয়ামী লীগ সমর্থিত ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নাজিম উদ্দিন মিকন, মো. আইয়ুব আলী, সালেকিন রিমন, জাহেদুল হক কচি, আবদুর রেজ্জাককে বিভিন্নভাবে হুমকি দিয়ে আতঙ্কের মধ্যে রেখে নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করছে।

সাধারণ ডায়েরিতে কাদের মির্জা আরও উল্লেখ করেন, চেয়ারম্যান প্রার্থী পরিচয় দিয়ে শাহাদাত হোসেন বসুরহাট পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. রাসেল, বসুরহাট পৌরসভা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হামিদ উল্যা হামিদ, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আইনুল মারুফকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে হত্যার হুমকি প্রদান করেন। বিষয়টি তিনি সরকারের উচ্চপদের কর্মকর্তাদের অবগত করেন।

এ বিষয়ে কোম্পানীগঞ্জ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রণব চৌধুরী বলেন, এ ঘটনায় সাধারণ ডায়েরি হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। তদন্ত করে এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই শাহদাত হোসেনের মনোনয়নপত্র গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

আজ হাইকোর্টের বিচারপতি মো. ইকবাল কবীর ও বিচারপতি মো. আক্তারুজ্জামানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ শাহদাত হোসেনের মনোনয়নপত্র গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন।

আদালতে শাহদাত হোসেনের পক্ষে ছিলেন- অ্যাডভোকেট একরামুল হক টুটুল ও তামান্না ফেরদৌস। ইসির পক্ষে ছিলেন, ব্যারিস্টার খান মোহাম্মদ শামীম আজিজ ও ব্যারিস্টার আশফাকুর রহমান।

অ্যাডভোকেট একরামুল হক টুটুল ও তামান্না ফেরদৌস এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।

এর আগে, গত ৯ মে আপিলেও নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী শাহদাত হোসেনের মনোনয়নপত্র বাতিলের সিদ্ধান্ত বহাল রাখা হয়।

গত ৫ মে যাচাই-বাছাইয়ে হলফনামায় মামলা ও আয় বিবরণীর তথ্য গোপন রাখায় শাহদাত হোসেনের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়। এরপর জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান বরাবর আপিল করেন শাহদাত। জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট দেওয়ান মাহবুবুর রহমান একই কারণে মনোনয়নপত্র বাতিল করেন। পরে এ সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন শাহদাত হোসেন।

জানা যায়, আগামী ২৯ মে তৃতীয় ধাপে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ, সদর ও বেগমগঞ্জ উপজেলায় ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। কোম্পানীগঞ্জে চেয়ারম্যান পদে সেতুমন্ত্রীর ভাইসহ চারজন প্রার্থী হয়েছেন। বাকি তিন প্রার্থী হলেন- উপজেলা যুবলীগের সাবেক আহ্বায়ক ও ব্যবসায়ী মোহাম্মদ গোলাম শরীফ চৌধুরী পিপুল, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান বাদল এবং যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ওমর আলী।


অবশেষে স্বজনদের দেখা পেলেন এমভি আবদুল্লাহর ২৩ নাবিক

চট্টগ্রাম বন্দর জেটিতে ফিরেছেন এমভি আবদুল্লাহ জাহাজের নাবিকরা। ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১৪ মে, ২০২৪ ১৮:০৩
নিজস্ব প্রতিবেদক

সোমালিয়ান জলদস্যুদের হাত থেকে মুক্ত হওয়া জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর ২৩ জন নাবিক নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের জেটিতে এসে পৌঁছেছে। জাহাজ এমভি জাহান মনি-৩ তাদের নিয়ে আসে। আজ মঙ্গলবার বিকেল ৪টার দিকে জাহাজটি জেটিতে পৌঁছায়।

জাহাজের নাবিকরা এরই মধ্যে স্বজনদের সঙ্গে কথাও বলেছেন। দীর্ঘদিন প্রাণভয়ে থাকার পর অবশেষে স্বজনদের কাছে পেয়ে নাবিকদের অনেকে কেঁদে ফেলেন। নাবিকদের বরণ করতে ফুল হাতে জেটিতে এসে দাঁড়িয়ে ছিলেন স্বজনরা।

জলদস্যুদের কবলে থাকার দিনগুলোকে বিভিষীকার দিন বলে আখ্যা দেন নাবিকদের বরণ করতে আসা একজন স্বজন। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘সেই দিনগুলোকে আর মনে করতে চাই না।’

এক মাস আগে সোমালিয়ার জলদস্যুদের কাছে জিম্মিদশা থেকে মুক্ত হওয়া এমভি আব্দুল্লাহ বাংলাদেশের কুতুবদিয়ায় নোঙ্গর করেছে গতকাল সোমবার সন্ধ্যায়। কিন্তু দেশে ফিরলেও স্বজনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে তাদের আরও এক দিন অপেক্ষা করতে হয়।

গত ৪ মার্চ আফ্রিকার মোজাম্বিকের মাপুটো বন্দর থেকে ৫৮ হাজার টন কয়লা নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতের হামরিয়াহ বন্দরে যাওয়ার পথে ১২ মার্চ সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবলে পড়ে জাহাজটি।

৩২ দিন জিম্মি থাকার পর ১৩ এপ্রিল জলদস্যুদের থেকে মুক্ত হয়ে দুবাই যায় জাহাজটি। এ সময় ইউরোপীয় ইউনিয়নের দুইটি যুদ্ধ জাহাজের পাহারায় এমভি আবদুল্লাহ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা পার হয়।


বিএসএফের বাধায় ৩ বছর ধরে বন্ধ মনু বাঁধের কাজ

ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১৪ মে, ২০২৪ ১১:৩৭
এম শাকিল রশীদ চৌধুরী, কুলাউড়া (মৌলভীবাজার)

মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় প্রায় তিন বছরেও মেরামত সম্পন্ন হয়নি মনু নদীর বাঁধ। ভারত সরকারের নানা অজুহাত ও বিএসএফের বাধার মুখে প্রতিরক্ষা বাঁধটির বাংলাদেশ অংশে কুলাউড়া উপজেলার শরীফপুর সীমান্তে ১ হাজার ৪০০ মিটার এলাকায় ভাঙন তীব্র হয়েছে। কয়েক হাজার মানুষ বর্ষায় বন্যাতঙ্কে রয়েছে। চাতলা ইমিগ্রেশন চেকপোস্টটিও হুমকির মুখে পড়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে, যৌথ নদী কমিশন মনু নদীর বাঁধ মেরামত ও তীর সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছে।

মনু নদীর ভাঙন আর বন্যা থেকে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া, রাজনগর ও মৌলভীবাজার সদর উপজেলাকে রক্ষার জন্য স্থায়ীভাবে নদীর তীর সংরক্ষণ ও বাঁধ মেরামতের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। ২০২১ সালে তিনটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নদীর বাঁধ মেরামত ও তীর সংরক্ষণের কাজ শুরু করলেও ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) এতে বাধা দেয়। তাদের বাধায় এখন পর্যন্ত কাজ বন্ধ রয়েছে।

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) মৌলভীবাজার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে কুলাউড়া উপজেলার শরীফপুর সীমান্তের মনু নদী প্রতিরক্ষা বাঁধের তিনটি পয়েন্টে ১ হাজার ৪০০ মিটার এলাকায় ব্যাপক ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। শরীফপুর ইউনিয়নের বাঁধের এ অংশ অনেক আগেই নদীর সঙ্গে মিশে একাকার হয়ে গেছে। বর্ষায় নদীতে পানি বাড়লে কোনটি প্রতিরক্ষা বাঁধ, কোনটি নদী, আর কোনটি গ্রাম তা বোঝার উপায় থাকে না।

সীমান্তবর্তী এই ইউনিয়নের মানুষ এখন বন্যাতঙ্কে রয়েছে। ২০১৮ সালের বন্যায় পুরো এই ইউনিয়নের কয়েক হাজার মানুষ ঘরবাড়ি হারিয়ে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়। ওই সময় চাতলাপুর ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট এলাকার রাস্তাঘাট, সেতু ও কালভার্ট বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে।

বাঁধ মেরামতের কাজের কথা ভারতকে জানানো হলেও দীর্ঘদিন সাড়া মেলেনি। ২০২৩ সালের আগস্ট মাসে যৌথ নদী কমিশনের কাছে এ কাজের অনুমতি চেয়ে ডিও চিঠি পাঠানো হয়। তাতেও ভারতপক্ষের সাড়া পাওয়া যায়নি। চলতি বছরের মার্চে ভারত তাদের পাঁচটি স্থানে নতুন করে নদীর তীর সংরক্ষণের জন্য বাংলাদেশের সম্মতি চায়। এ স্থানগুলো তাদের অংশে পড়েছে বলে ভারতীয় পক্ষ দাবি করেছে। এতে কুলাউড়া উপজেলার শরীফপুর ইউনিয়ন সীমান্তের নদীভাঙন প্রতিরোধ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

স্থানীয় লোকজনের বক্তব্য, বর্ষার আগেই নদী প্রতিরক্ষা বাঁধ মেরামতের কাজ শেষ করতে হবে। না হলে বন্যার আতঙ্কে থাকতে হবে।

পাউবোর মৌলভীবাজার কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জাবেদ ইকবাল বলেন, গত ১ এপ্রিল পাউবো তত্ত্বাবধায়কের নেতৃত্বে একটি টিম সীমান্ত এলাকা সরেজমিনে পরিদর্শন করে। সে সময় ভারত সরকারের দাবি করা পাঁচটি স্থান বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকায় না থাকায় এ ব্যাপারে
সঠিক কোনো কিছু জানা যায়নি।

তিনি আরও বলেন, গত বছর যৌথ নদী কমিশনের মাধ্যমে কাজ শুরু করার জন্য আবেদন করা হয়। কিন্তু এ ব্যাপারে অন্যপক্ষের সাড়া পাওয়া যায়নি। এরপর আরও কয়েকবার আবেদন করা হয়। সম্প্রতি যৌথ নদী কমিশনের মাধ্যমে মনু নদীর ভারত অংশে ভাঙনের ৫টি স্থান দেখার জন্য পাউবোর পক্ষ থেকে বিজিবির মহাপরিচালকের কাছে আবেদন করা হয়েছে। বিএসএফ স্থানগুলো দেখার অনুমতি দিলে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।


banner close